আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটিতে দলীয় কাউন্সিলরেরা পদ পাবেন না। তারা জনগণের সেবায় বেশি সময় দেবেন। এমন নির্দেশনার পরও এই কমিটিতে ১০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ পেয়েছেন। এ নিয়ে দলের তৃণমূল পর্যায়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, কাউন্সিলরদের কারণে অনেক যোগ্য লোক সংগঠনে জায়গা পাননি। অথচ দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের নাম বাদ দিলে অন্যরা কমিটিতে সুযোগ পেতেন। দলের ভেতর কোন্দলের সৃষ্টি হতো না।
২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে আবু আহমেদ মান্নাফীকে সভাপতি ও হুমায়ুন কবীরকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এর এক বছর পর গত ১৯ নভেম্বর এই কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই কাউন্সিলরদের পদ পাওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
মহানগর দক্ষিণ কমিটিতে ১০ কাউন্সিলর
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রকাশিত কমিটির তালিকায় স্বাক্ষর করেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
৭৫ সদস্যের এই তালিকায় দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০ জন কাউন্সিলরও রয়েছেন। তারা হলেন—ডিএসসিসির দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, নয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খ ম মামুনুর রশিদ শুভ্র, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল বাশার, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর-বিন-আবদাল আজিজ তামিম, ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম খান দিলু, সংরক্ষিত পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলী এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের লাভলী চৌধুরী।
এ বিষয়ে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আগের কমিটিতেও কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। এবারও দল থেকে ওই পদে তার নাম রাখা হয়েছে। এখন জনসেবার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও সক্রিয় থাকবেন তিনি।
তবে কমিটিতে পদবঞ্চিত এক নেতা বলেন, ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যারা ঢাকা মহানগর, থানা এবং ওয়ার্ডে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পাবেন না। একইভাবে যারা মেয়র ও কাউন্সিলর হবেন, তারা দলে দায়িত্ব পাবেন না। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর অনেক কাউন্সিলরই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। তাই এবারও কমিটি গঠনে কঠোরভাবে সতর্ক করেছিলেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু তার নির্দেশনার শতভাগ প্রতিফল ঘটেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর জানান, কমিটি গঠনের আগে তারা দলের সভাপতির (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখন মহানগর, থানা এবং ওয়ার্ড কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউন্সিলরদের না রাখতে দলের সভাপতি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাই তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়নি। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে রাখা হয়েছে। এখন তারা জনসেবার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবেন।
উপদেষ্টা পরিষদে বিতর্কিত এমপি
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হয়েছেন ঢাকা-৭ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় তার ছেলে ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার চকবাজারের বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তখন ইরফান সেলিমকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
এরপর থেকে হাজী সেলিমের একের পর এক অপরাধের চিত্র বেরিয়ে আসে। এর মধ্যেই তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করায় এ নিয়েও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।